light house

প্রশিক্ষণের মাধ্যমে হিজড়াদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে: সমাজসেবা ডিজি

দেশের সবচেয়ে অবহেলিত জনগোষ্ঠী হচ্ছে হিজড়ারা। দেশের আর্থিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক কোনো সুবিধাই তারা ঠিকঠাক পান না। তারা পরিবারের থেকে বিছিন্ন হয়ে কেবল মাত্র ভিক্ষাবৃত্তি করে অতি মানবেতর জীবন যাপন করেন। এ অবস্থায় তাদেরকে একটি হিজড়া ভিলেজ তৈরি করে ও সকলের আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে সকলকে প্রশিক্ষণের আওতায় এনে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানানো হয়। 

সোমবার (২০ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁও সমাজসেবা অধিদপ্তর মিলনায়তনে সমাজসেবা অধিদপ্তর ও বেসরকারি সংস্থা লাইট হাউস যৌথ আয়োজিত হিজড়াদের সরকারি পরিষেবায় অভিগম্যতা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে নবপ্রণীত নীতিমালা বিষয়ে মত বিনিময় সভায় এসব দাবি জানানো হয়।

লাইট হাউসের নির্বাহী প্রধান মো. হারুন অর রশিদের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. সাইদুর রহমান খান। 

সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (সামাজিক নিরাপত্তা) মো. মোশারফ হোসেন, অতিরিক্ত পরিচালক-৪ (অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা শাখা) এম এম মাহমুদুল্লাহ, অতিরিক্ত পরিচালক-১ (বয়স্ক ভাতা শাখা) ফরিদ আহমেদ মোল্লা, উপপরিচালক (ভিক্ষুক, চা শ্রমিক ও হিজড়া) মো. শাহ জাহান, উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. রবিউল করিম, অফিসার আসাদুজ্জামান, লাইট হাউজের উপদেষ্টা ওয়াহিদা ইয়াসমিন। 

এছাড়া কর্মশালায় লাইট হাউজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কর্মশালায় বনানী, মহাখালী, বাড্ডা, রামপুরা ও মগবাজারসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় ২৫ জন হজিড়া সদস্য অংশ নেন। 

সভায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. সাইদুর রহমান খান বলেন, যার পাশে কেউ নেই, তার পাশে সমাজ সেবা অধিদপ্তর। অর্থাৎ সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের সেবার কথা চিন্তা করে। সবাইকে সেবার আওতায় আনতে চায় অধিদপ্তর। তিনি বলেন, সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের সেবার সব দরজা যখন বন্ধ হলেও সমাজসেবা অধিদপ্তরের সেবা বন্ধ হয় না। অর্থাৎ সকল সেবার শেষ ভরসা হলো সমাজসেবা অধিদপ্তরের সেবা। হিজড়াদের জন্য চলতি বছর থেকেই মাসিক ভাতা ৬৫০ টাকা জন প্রতি চালু করেছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। কিন্তু এই ভাড়া নেওয়ার লোক পাওয়া যাচ্ছে না। বছরের শেষ প্রান্তে এসেও মাত্র সাড়ে তিন হাজার এই সেবার সুবিধাভোগী। অথচ সরকারি তালিকাভুক্ত হিজড়া রয়েছে ১২ হাজার ২২৯ জন। তিনি বলেন, এখনো সময় আছে, যারা এখনো আবেদন করেননি তারা আগামী ৬ নভেম্বর এর মধ্যে আবেদন করতে পারবেন। এর পরে প্রাপ্ত অর্থ বিতরনের পরিবর্তে ফেরত দিতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এক্ষেত্রে তিনি সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতার আহ্বান জানান। 

তিনি আরো বলেন, বর্তমান সমাজে অধিকার কেউ দেয় না, যার অধিকার তাকেই আদয়ি করে নিতে হবে। তিনি আরো বলেন, হিজড়াদের জন্য সরকার অনেক কিছুই করছে। এর অংশ হিসেবে বয়সের বার ছাড়াই ভাতা চাল, ৫০ হাজার টাকার বৃত্তি চালু, টিসিবির মাধ্যমে কম দামে নিত্য পণ্য প্রদান ইত্যাদ্দি। 

লাইট হাউসের নির্বাহী প্রধান মো. হারুন অর রশিদ বলেন, হিজড়া জনগোষ্ঠীরা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গাতে ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অনেক ক্ষেত্রে নিজের পরিবারও তাদের পাশে থাকে না। অথচ দেশের একেবারেই ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী হিজড়ারা। এমতাবস্থায় তাদের জন্য সরকারিভাবে একটি ভিলেজ ঠিক করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ তাদের সকল দাবি ও সেবা নিশ্চিত করতে পারে। অর্থাৎ একের ভিতরে সব সেবা পাবে হিজড়ারা। একই সঙ্গে তাদের মধ্যে তারা যোগ্য আছেন তাদেরকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চাকরির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। পাশিপাশি সিটি করপোরেশনের আওতাধীন কিছু দোকান তাদেরকে বরাদ্দ দিয়ে তাদের ব্যবসায়ী করারও চিন্তা করার দাবি জানান। এভাবে সবাইকে কর্মসংস্থানের আওতায় আনার জোর দাবি জানান তিনি। 

লাইট হাউজের উপদেষ্টা ওয়াহিদা ইয়াসমিন বলেন, হিজড়াদের বাছাই করে ও ভাগ ভাগ করে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। আর শিক্ষিতদের যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি বিভন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ করে দেওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন তিনি। একই সঙ্গে সকল হিজড়াদের জন্য আবাসন ব্যবস্থার জোর দাবি জানান তিনি।    

আজকালের খবর/বিএস 

News Source: https://ajkalerkhobor.net/news/190372

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *