light house

নারীর ক্ষমতায়ন ও জলবায়ু ন্যায্যতা নিশ্চিতে উদ্যোগ

রাজশাহীতে লাইট হাউজ নাগরিক অধিকার ও জলবায়ু ন্যায্যতা প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (১২ অক্টোবর) সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত উদ্বোধনী সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খান।

সিভিক এনগেজমেন্ট ফান্ড (সিইএফ)-নাগরিকতা প্রোগ্রাম, সুইজারল্যান্ড দূতাবাস ও গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার অর্থায়নে এবং জিএফএ কনসাল্টিং গ্রুপের কারিগরি সহায়তায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে উন্নয়ন সংস্থা লাইট হাউজ। প্রকল্পের লক্ষ্য হলো নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়ন, জলবায়ু ন্যায্যতা নিশ্চিতকরণ এবং স্থানীয় পর্যায়ে সামাজিক সম্প্রীতি জোরদার করা।

সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী বিভাগের কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, সমাজসেবা অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) সৈয়দ মোস্তাক হাসান, রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম. ইলিয়াস হোসেন। সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার এবং সঞ্চালনা করেন লাইট হাউজের নির্বাহী প্রধান মো. হারুন অর রশিদ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খান বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠা টেকসই উন্নয়নের মূল ভিত্তি। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নারীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

লাইট হাউজের এই উদ্যোগ নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধির পাশাপাশি জলবায়ু ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

তিনি আরো বলেন, সরকার, নাগরিক সমাজ ও উন্নয়ন সহযোগীদের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সহনশীল সমাজ গড়ে তুলতে পারব, যেখানে কেউ পিছিয়ে থাকবে না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন আমাদের বাস্তবতা। স্থানীয় পর্যায়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করে অভিযোজনমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করলেই টেকসই সমাধান সম্ভব।

নাগরিক অধিকার ও জলবায়ু ন্যায্যতা প্রকল্পটি সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

সমাজসেবা অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগের পরিচালক সৈয়দ মোস্তাক হাসান বলেন, প্রকল্পটি শুধুমাত্র নারীর ক্ষমতায়ন নয়, বরং সমাজের পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর সার্বিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখবে।

রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম বলেন, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে সমাজের প্রতিটি নাগরিকের অংশগ্রহণ জরুরি। এই প্রকল্প নারীর নিরাপত্তা ও সহায়তায় নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম. ইলিয়াস হোসেন বলেন, জলবায়ু ন্যায্যতা শুধু পরিবেশ নয়, এটি সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতার বিষয়।

শিক্ষার্থী ও গবেষকদের সম্পৃক্ত করে এই বিষয়ে জ্ঞানভিত্তিক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার বলেন, রাজশাহী জেলা প্রশাসন সবসময় নাগরিক অংশগ্রহণমূলক উন্নয়ন কার্যক্রমকে উৎসাহিত করে। লাইট হাউজের এই প্রকল্প স্থানীয় জনগণ, নারী নেত্রী ও সিভিল সোসাইটিকে একত্রে এনে জলবায়ু ন্যায্যতার বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. এস. আই. এম. রেজাউল করিম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ) মো. যোবায়ের হোসেন, সিনিয়র সহকারী জজ ও জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার মো. আরিফুল ইসলাম এবং সিভিক এনগেজমেন্ট ফান্ডের ফান্ড ম্যানেজমেন্ট এক্সপার্ট আজিজা আসফিন। সভায় আজিজা আসফিন প্রকল্পের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন এবং এর উদ্দেশ্য, কাঠামো ও প্রত্যাশিত ফলাফল বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন। পরে লাইট হাউজের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. মুশফিকুর রহমান প্রকল্পের মূল কার্যক্রম ও বাস্তবায়ন পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন।

প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের ছয়টি জেলায় নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বাড়ানো, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার শিকার নারীদের সহায়তা ও রেফারেল সেবা প্রদান, যুব সমাজের মানসিক ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে কাউন্সেলিং, স্থানীয় সিভিল সোসাইটি সংগঠনের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতনতা গড়ে তোলা হবে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রকল্পটি জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি)–এর ৫ (লিঙ্গ সমতা), ১৩ (জলবায়ু কার্যক্রম) এবং ১৬ (শান্তি, ন্যায়বিচার ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান) বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখবে।

Source: https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2025/10/12/1590535

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *