light house

দুর্যোগে সাড়া দিবে লাইট হাউজ ওয়েব অ্যাপস ‘রিপোর্ট নাও বিডি’

কুড়িগ্রামের চিলমারী, রাজিবপুর ও উলিপুরের ব্রহ্মপুত্রের চরের মানুষের স্যানিটেশন ব্যবস্থা দূর্বল হওয়ায় মারাত্মকভাবে স্বাস্থ্য ঝুকিতে আছেন গর্ভবর্তী নারী, বয়স্ক মানুষ ও শিশু-কিশোরীরা। এ কারণে বন্যার সময় নারী ও কিশোরীরা মানসিক ও শারীরিক সহিংসতার শিকার হন।

সরেজমিনে উপজেলা ৩টির বিভিন্ন চরাঞ্চল ঘুরে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চল চিলমারী ইউনিয়নের শাখাহাতি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও নেই কোনো উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এখানকার মেয়েদেকে উপজেলা সদর কিংবা চর কড়াইবরিশাল নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে হয়। অধিকাংশ বাড়িতে নেই স্যানিটেশন ব্যবস্থা। ২/১টি বাড়িতে থাকলেও তা কাঁচা ল্যাট্রিন। এখানকার কিশোরীরা জানেনা মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে। 

চরের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশিরভাগ সময় তারা খোলা আকাশের নীচে পায়খানা করতে অভ্যস্ত। নদীর কিনারে কিংবা ঝোঁপে-ঝাঁড়ে পায়খানা করেন বলে জানান তারা। অর্ধশতাধিক নারী ও কিশোরীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুরুষরা কাজের জন্য মাঠে থাকেন। তারা মাঠেই পায়খানা-প্রসাবের কাজ সেরে নেন। মহিলারাও মাঠে কাজ করেন। তবে তারা খোলা মেলা জায়গায় না গিয়ে বাড়ির পাশে গর্ত করে ল্যাট্রিন তৈরি করেছেন। সেখানে তারা পায়খানা ও প্রসাব করেন।

লাইট হাউজের স্বেচ্ছাসেবী হোসেইন মোহাম্মদ মেহেদী জানান, আমরা লাইট হাউজ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এলাকার মানুষকে সচেতন করছি। মানুষ ধীরে ধীরে সচেতন হচ্ছেন। কিশোরী ও গর্ভবতী মায়েদের নিয়ে উঠান বৈঠক করে সচেতন করছি। এখানে শিক্ষিত ছেলে মেয়ে নেই। প্রাথমিকের গন্ডি পেরুলেই তাদেররেকে বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। এছাড়া এখানে কারো রোগবালাই হলে ভাল চিকিৎসা হয় না। বন্যার সময় ও পরবর্তী দিনগুলোতে এখানে গর্ভবর্তী ও অসুস্থ্য নারীদের চিকিৎসাসেবা হয় না। চিকিৎসা অভাবে হাসপাতালে নিতে না পারায় অনেক নারী ও বৃদ্ধ রোগী মারা যায়।

অষ্টমীরচরের স্বেচ্ছাসেবী হেলেনা হ্যাপী বলেন, বন্যা হলে এই চর ডুবে যায়। আমাদের খুব কষ্ট হয়। বাড়ি ঘর, রাস্তা পানির নীচে তলিয়ে যায়। তখন পায়খানা করা খুব কষ্ট হয়। এই চরের নারীরা স্যানিটারী ন্যাপকিন ব্যবহার করে না। পুরাতন কাপড় দিয়ে কাজ চালিয়ে নেয়। অসচেতনতার অভাবে নানা রোগ বালাইয়ের শিকার হতে হয়। গত কয়েক মাসে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে কিছুটা সচেতন করতে পেরেছি।

নয়ারহাট ইউনিয়নের মুসফিকা বিনতে বৃষ্টি জানায়, এটি একটি দুর্গম চর এলাকা। এখানে নেই কোনো স্বাস্থ্য কেন্দ্র। সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা কালে-ভাদ্রে আসে এনজিওদের নৌকায় করে। দুপুর হলেই তারা আবার উপজেলা সদরে ফিরে যায়। তারা তাদের ডিউটি পালন করে মাত্র। মানুষের কি হলো সেটা তাদের কাছে বড় ব্যাপার নয়। 

মোল্লার চরের শিক্ষিত সমাজ-সচেতন শহিদুল ইসলাম জানান, চরের মানুষের জন্য দরকার একটি রিভার এ্যাম্বুলেন্স্য। যাতে বন্যা ও দুর্যোগকালীন সময়ে অসুস্থ্য হলে কিংবা গর্ভবতী মায়েদের দ্রুত হাসপাতালে নেয়া যায়। 

রাজিবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের মমেদা আক্তার মুন্নী ও জাহিদ হাসান জানান, রাজিবপুর উপজেলা একটি দুর্যোগ প্রবণ উপজেলা। বন্যার সময় মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। আমরা লাইট হাউজ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে লোকজনকে সচেতন করছি, যাতে দুর্যোগের সময় ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা যায়।

লাইট হাউজের কুড়িগ্রামের প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দুর্যোগ নিয়ে লাইট হাউজ কাজ করছে। চরাঞ্চলে জেন্ডার-স্যানিটেশন ও দূর্যোগকালীন সময়ে মহিলা ও কিশোরীদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেয়ার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়া চরের মানুষ ও কৃষকদের জন্য অ্যাপস তৈরি করে আবহাওয়া বার্তা দেয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

লাইট হাউজের প্রজেক্ট ম্যানেজার ও ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন লিড মনিরুল ইসলাম বলেন, লাইট হাউজের পক্ষ থেকে একটি ওয়েব অ্যাপস রিপোর্ট নাও বিডি করা হয়েছে। এখানে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী, উলিপুর, কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট ও রাজিবপুর উপজেলা থেকে ৫ জন সাংবাদিক যুক্ত হয়েছেন। তারা বন্যা ও দুর্যোগকালীন সময়ে এলাকার সার্বিক চিত্র তুলে ধরে এই অ্যাপস এ নিউজ দিবেন। আমরা সেটি প্রাথমিক যাচাই বাচাই করে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এসএমএস ও ই-মেইলের মাধ্যমে প্রেরণ করবো। সেখানে যা প্রয়োজন সেখানে দ্রুত তারা সাড়া দিবেন। লাইট হাউজ মুলত দুর্যোগে দ্রুত রেসপন্স করে কিভাবে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করছে।

চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সবুজ কুমার বসাক বলেন, আমি হেঁটে হেঁটে চরের মানুষের জীবনমান দেখেছি। চরের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটতে পারে, আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *